২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:৫১:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিবের হুশিয়ারি
`বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ো যাও ধান, এবার আর সেটা হবে না'
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৩
`বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ো যাও ধান, এবার আর সেটা হবে না' সোহরাওয়ার্দি উদ্যোনের তারুন্যের সমাবেশটি যেন জনসমুদ্রে রূপ নেয়/ছবি সংগৃহীত


নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকালে তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ ওদের লক্ষ্য একটাই যে ভয় দেখিয়ে মানুষকে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে জনগনকে ভয় দেখিয়ে এই নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।আবার তারা ওই রাতের অন্ধাকার না, এবার তারা নতুন নতুন কৌশল করেছে… সব ডিসি-এসপি তারা তাদের পছন্দমতো নিয়োগ দিচ্ছে। উদ্দেশ্য কি? এরা দিনের আলোয় তারা কৌশল করে, সিল মেরে আবার নিয়ে যাবে। কিন্তু বন্ধুগণ … বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ো যাও ধান, এবার আর সেটা হবে না। এবার এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা শুধু বিএনপি নই, আমরা ৩৬টি দল যুগপতভাবে ঘোষণা দিয়েছি যে, আমরা বাংলাদেশে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সেজন্য কি চাই? অবিলম্বে এই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’’

‘এরা ভীরু, কাপুরুষ’

সম্প্রতি ঢাকা,লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলে আজকে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এরা ভীরু কাপুরুষ সরকার, নির্বাচনকে ভয় পায়। আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আমরা এক দফা দাবি দিয়েছি। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রায় সমন্বরে বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শুধু আমরা না্। এই যে জাতীয় পার্টি যারা পার্লামেন্টে আছে তারা পর্যন্ত বলছে পরিস্কার করে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এই ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন তাদের পীরসাহেব পরিস্কার করে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও বলেছে,অন্যান্য দলও বলেছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ‘দশটা আসন’ও পাবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। ফখরুল সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আর কালবিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে নির্বাচন করুন।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘আওয়ামী লীগের দাসানুদাস’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার সাড়ে তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী যুব দল-জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে ‘তারুণ্যে’র এ সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় পৌনে ৬টায়। সমাবেশের প্রথম পর্বে ছিলো তরুন শিল্পীদের গণসঙ্গীত পরিবেশনা। এই অনুষ্ঠান চলাকালে বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে মঞ্চে শিল্পীদের সাথে ব্যাপক সংখ্যক নেতা-কর্মীরা উঠলে হঠাত মঞ্চটি ধসে পড়ে।

পরে একটি ছোট পিকআপ এনে অস্থায়ী মঞ্চে কয়েকটি চেয়ার বসিয়ে সমাবেশের কার্য্ক্রম শুরু হয় বিকাল সাড়ে তিনটায়।

সকাল থেকে ঢাকাসহ তা আশ-পাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর অংশ গ্রহনে সোহরাওয়ার্দি উদ্যোনের সমাবেশটি যুবসমুদ্রে রূপ নেয়। বিকালে তিনটায় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে তিল পরিামান ঠাই ছিলো না, সমাবেশ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, শাহবাগ ও মতস্যভবন সড়ক ছাড়িয়ে যায়।

সমাবেশ স্থলে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বিশাল রুঙিন বেলুন উড়ানো হয়।

বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের আয়োজনে দেশের ছয় বিভাগে যে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ এর সূচনা হয়েছিল গত মাসে, সোহরায়ার্দি উদ্যানে এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হলো তারুণ্যের সমাবেশের কর্মসূচি।



‘বেচারা হীরো আলম’

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এবার ভোটের কী আলামত? আমরা সেইদিন দেখলাম ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের আসনে। বেচারা হীরো আলম। বাচ্চা ছেলে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি… সে একটা আশা নিয়ে গিয়েছিলো অন্তুত তাকে ভোটটা করতে দেবে।  কিন্তু এটা যে আওয়ামী লীগ.. এটা সে বুঝতে পারেনি বেচারা। আওয়ামী লীগ সেই দল, সেই সন্ত্রাসী যে, অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। তারা কথা বলাও সহ্য করতে পারে না, কেউ তার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াবে তাও সহ্য করতে পারে না। ওরা মনে করে এটা তাদের বাপের তালুকদারি। অথচ এই দেশ ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে….।”

দেশের মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে পাচারের নানা ঘটনাও তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।


সোহরাওয়ার্দি উদ্যোনের সমাবেশে তারুন্যের মুখ/ছবি সংগৃহীত



‘ডেঙ্গু প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেখেন ঢাকায় ডেঙ্গুর কি অবস্থা। ডেঙ্গুর চিকিতসা নিতে হাসপাতালে সিট নেই। মশা মারার কোনো চেষ্টা এদের নাই।”

‘‘ মশা মারবে কোথায়? মশা মারার জন্য যে ব্যবস্থা নিতে হবে তারা তো ব্যস্ত হয়ে আছে কিভাবে টাকা পাচার করবে বিদেশে।”

যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহ প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

তারুণ্যের এই সমাবেশে ‘গুমের শিকার’ নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্য, ভোটার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ভোট দিতে না পারা তরুণ-তরুনী এবং বর্তমান সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত ও চাকুরি বঞ্চিত কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান,শাহবাগ, মতস্যভবন এলাকায় ব্যাপক সংখ্যাক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জলকামান, সাজোঁয়া যান, প্রিজন ভ্যানের গাড়িও দেখা গেছে শাহবাগ ও মতস্যভবনের সড়ক মোড়ে ।

শেয়ার করুন